ড. মো. নাজিরুল ইসলাম
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের স্বনামধন্য কৃষিবিজ্ঞানী ড. মো. নাজিরুল ইসলাম ১০ মে ২০২০ রবিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। গত ০৫ মে ২০২০ কৃষি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশ বলে তিনি বারি’র মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক এই বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালের ১০ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন।
বারি’র মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি বারি’র পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইতোপূর্বে তিনি বারি’র উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বারি’র প্রধান কার্যালয় ছাড়াও তিনি আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, নরসিংদী, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বরিশাল, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, যশোর এবং কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রাজবাড়ী, দিনাজপুরে সফলভাবে কৃষকের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ করেন।
ড. মো. নাজিরুল ইসলাম ২০০৬ সালে ফিলিপাইনের ইউনিভার্সিটি অব দি ফিলিপাইন, লস ব্যানস থেকে উদ্যানতত্ত্ব (মেজর) ও কৌলিসম্পদ (মাইনর) বিষয়ে সফলতার সাথে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন সায়েন্টিফিক জার্নালে তাঁর ২৭টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করেন।
দেশের কৃষি গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য ড. মো. নাজিরুল ইসলাম-কে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২২ প্রদান করেন।
তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং সিম্পোজিয়ামে যোগদানের উদ্দেশ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেন। এছাড়া তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ উদ্যানতত্ত্ব সমিতি, বাংলাদেশ কীটতাত্ত্বিক সমিতি, বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিজ্ঞানী সমিতি এবং বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সদস্য।
ড. মো. নাজিরুল ইসলাম দেশে নারিকেল নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নারিকেল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজন করে এর বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসং¯’ান ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধির বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। সাধারণত আমাদের দেশে নারিকেলের আঁশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এটা জাড়িত (ব্লিচিং) করে রাসায়নিক পদ্ধতিতে সাদা আঁশ তৈরির মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করা যায়। ২০০৮ সালে ড. মো. নাজিরুল ইসলাম এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন এবং যশোরের কোকো ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি তা ব্যবহার করে নেদারল্যান্ড ও চীনে নারিকেলের দড়ি রপ্তানি শুরু করে।
এছাড়া তিনি নারিকেলের খোসা থেকে বের হওয়া তুষ দিয়ে মাশরুম চাষ এবং ব্যবহৃত তুষ পচিয়ে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি ২০০১ সালে নারিকেলের খোসা থেকে যান্ত্রিক উপায়ে আঁশ বের করার পদ্ধতি প্রবর্তন করেন ।